কালী কিঙ্কর গাঙ্গুলী বলতে শুরু করলেন –
এ আমার সাধনার জীবনের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা। গ্রামে গঞ্জে নানা শ্মশান ঘাটে কাটিয়ে মাঝে মধ্যেই পথের টানে বেরিয়ে পড়ি যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে। ঘুরে বেড়াই উদ্দেশ্যহীন ভাবে। তা সেবার হলো কি সকাল থেকে অনেক খানি পথ হেঁটে হেঁটে আমি ক্লান্ত। আশে পাশে কোনো মন্দির বা গৃহস্থের বাড়ি ও দেখতে পাচ্ছিনা। রাতটা বোধ করি পথেই কাটাতে হবে। সেই মত আবার হাঁটতে থাকলাম। বেশ অনেকটা পথ পেরিয়ে হঠাৎ চোখে পড়ল রেল স্টেশন। মনে মনে ভাবলাম আরে! আর কয়েক ক্রোশ গেলেই তো আমার মেজ পিসির বাড়ি। সেখানে পৌঁছাতে পারলেই রাত কাটানোর একটা হিল্লে হয়। কিন্তু সারাদিনের হাঁটার ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসছে। পায়ে একফোঁটা জোর নেই। কোমর ভেঙে পড়ছে প্রায়। এমন সময় দেখি একটি গরুর গাড়ি স্টেশনের বাইরের বড় বটগাছটার নীচে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে গারোয়ান কপালে হাত দিয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। আমি তাকে ধাক্কা দিতেই সে বিরক্তি নিয়ে উঠে বসে জিজ্ঞেস করলো,”কি চাই?”
আমি বললাম, “ভাই আমাকে একটু রাধিকা পুর পৌঁছে দেবে?”
সে বললো, “না এখন ভাড়া হবেনা। আপনি আসুন। কাল সকালে আসবেন নিয়ে যাবো।”
আমি বললাম, “চলো না ভাই। তিনগুন বেশি ভাড়া দেব।”
তিনগুন ভাড়া শুনে বোধ করি তার একটু লোভ হলো। দেখলাম বেশ নড়ে চড়ে বসলো।
মুখ ব্যাজার করে সে বলল, “বসুন।”
এই বলে সে গরুর ল্যাজ মুচড়ে হ্যাট হ্যাট করতে করতে নিয়ে চললো। এদিকে আমি পেছনে বসে ভাবছি এক আনাও তো আমার কাছে নেই। তিনগুন ভাড়া তো দূরের কথা। আমার পকেটে একটা নয়া পয়সাও নেই।
একে দেব কি?
এমন সময় মাথায় খেলে গেল এক দুষ্টু বুদ্ধি। মনে হলো গুরুর থেকে শেখা বিদ্যে তবে কবে কাজে আসবে আমার?
আমি গাড়ওয়ানকে বললাম, “তোমার নাম কি ভাই? রঘু?”
গারোয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি করে জানলেন?”
আমি হেসে বললাম, “আরো অনেক কিছু জানি। এই যেমন ধরো তোমার একটি ছেলে একটি মেয়ে। ছেলেটি খুব রোগা আর খুব ভোগে। মেয়েটি বেশ কর্মঠ। তার মাকে প্রচুর কাজে সাহায্য করে। বর্তমানে তোমার বাড়িতে একটি অযাচিত অশান্তি চলছে। গারোয়ান গাড়ি থামিয়ে তড়িঘড়ি নেমে আমার পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বললে, “আপনি কে বাবা ঠাকুর? আপনার তো অসীম ক্ষমতা। আমার বোনের মহা বিপদ ঠাকুর। ওকে আপনি ছাড়া আর কেউ রক্ষা করতে পারবে না। আপনি বাঁচান। রাধা মাধবই আপনার সাথে আমার দেখা করিয়ে দিয়েছেন।”
অনেক দিন ধরেই আমার কাছে ম্যাসেজ আসছিল, “ দিদি আপনার কাছ থেকে তারানাথ তান্ত্রিকের মত গল্প চাই।“শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত ক্ষুরধার লেখনী আমার নয়।“তারানাথ তান্ত্রিক” আপনাদের সকলের মতই আমারও একটি প্রিয় চরিত্র। সেই মত আরেকটি চরিত্র সৃষ্টি করার সাহস বা ধৃষ্টতা কোনটাই আমার ছিল না। তবু পাঠকের চাহিদা, সব থেকে বড় আমার কাছে। তাই সৃষ্টি হল কালী কিঙ্কর তান্ত্রিক। তারানাথ তান্ত্রিকের মতই বৈঠকি ঢঙ্গে গল্প বলেছেন আমার সৃষ্ট চরিত্র কালী কিঙ্কর তান্ত্রিক, উপরিউক্ত তিনটি গল্পে। বাকী চারটি গল্প ভিন্ন স্বাদের তন্ত্র ভিত্তিক গল্প।
এই বইটিতে আমি চেষ্টা করেছি চিরাচরিত বাংলা ভৌতিক তন্ত্রের গল্প আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার। সাতটি তন্ত্রাশ্রিত, চিরচরিত ভৌতিক ও অলৌকিক জঁরের গল্প রয়েছে “ সপ্ততন্ত্র “ বইটিতে। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
Reviews
There are no reviews yet.