-“শোনো চন্দ্রশেখর; তোমার জন্মকুণ্ডলীতেই লেখা ছিল এই দ্বীপনগরের কোনো এক ভয়ংকর দুঃসময়ে তুমিই পথিকৃৎ হিসেবে সকলকে আলোর পথ দেখাবে। আমি নিজের হাতে তোমার জন্মকুণ্ডলী বানিয়েছি, যদিও তখনও ভাবতেই পারিনি যে এই দুঃসময় এতো ভয়ঙ্কর, এত প্রলয়ঙ্করী হবে! আজ সেই সময় উপস্থিত চন্দ্র শেখর। দ্বীপ নগরের এই দুর্দিনে সমস্ত নগরবাসী তোমার মুখ চেয়ে আছে। তোমায় যা বলেছি তুমি সেটা করতে পারবে তো? বিট্টালিনী সাধনা কিন্তু মুখের কথা নয়!” – অত্যন্ত গম্ভীর কণ্ঠে সামনে বসে থাকা মাত্র আঠেরো বছরের চন্দ্রশেখরকে কথাগুলো বলল বজ্রাকিনী।
-“হ্যা, আমি পারবো মা। আমার পিতা আর তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মিলে এই দ্বীপনগরে যে ভয়ঙ্কর দুর্দিন ডেকে এনেছে, আজ আমি শপথ নিচ্ছি আমি নিজে সেই দুর্দিনের অবসান ঘটাবো, ঘটাবোই… তারজন্য যদি বিট্টালিনী সাধনা করতে হয়, তাও করবো !”
আনুমানিক দশম খ্রিস্টাব্দে যখন বাংলার বুকে রাজত্ব করছেন পাল রাজারা, খোদ রাজ পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলার বৌদ্ধ ধর্ম লাভ করেছে ব্যাপক আকার এবং বাংলার জনমানসে আস্তে আস্তে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাঙালি জাতির নিজস্ব মাতৃকাতন্ত্র তখন তাম্রলিপ্তির অন্তর্গত দ্বীপনগরে ঘনিয়ে এলো এক অতর্কিত আক্রমণ ! কী সেই আক্রমণ? দ্বীপনগরের বুকে কী দুর্দিনই বা নেমে এসেছিল তাতে? বিয়াল্লিশ বাহিনীই বা কারা? বজ্রযানতন্ত্র, কামবজ্রযান, ত্রিরত্নবিদ্যা ও ত্রিরত্নযান প্রাচীন বাংলার এই তন্ত্রের ধারাগুলোই বা কিভাবে যুক্ত দ্বীপনগরের সেই ভয়ঙ্কর অধ্যায়ের সঙ্গে? শুধুই কি তন্ত্র শাস্ত্র আর আখ্যায়িকা নাকি বিট্টালিনী সাধনার ইতিহাসে আসলে লুকানো আছে বাংলার এমন এক অধ্যায়ের কথা যা ইতিহাসের পাতায় এর আগে কখনো লেখা হয়নি!
সময়: ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ
ঠাকুরদার ঘরেই অতি সংগোপনে খুঁজতে খুঁজতে একসময়ে পুঁথিটা পেয়ে গেল বিজয় ওরফে বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্য! পুঁথিটার নাম “বিট্টালিনী সাধনম” ! এবার
… এবার ওকে কে আটকাবে বড়লোক হওয়া থেকে! হ্যা হ্যা বাবাকে ও দেখিয়ে দেবে এ সমাজে অত সৎ সাজলে হয় না…মাঝে মাঝে ভেক ধরতে হয়! তন্ত্র দিয়ে যে শুধু লোকের ভালো নয় বরং নিজেরও স্বার্থসিদ্ধি করা যায় তা এবার বিট্টালিনী সাধনা করে বাবাকে দেখিয়ে দেবে বিজয়…
সময়: ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ
-“উহু। মাতঙ্গী সাধনা মুখের কথা নয় সুদীপ! অতি বড় সাধকরাও সেই সাধনা করতে ভয় পান। সে সাধনায় লাভের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। দেবী মাতঙ্গী সন্তুষ্ট অবস্থায় বরপ্রদায়িনী হলেও এমনিতে তিনি খল ও ক্রুর প্রকৃতির। সাধনায় নূন্যতম বিচ্যুতি ঘটলেও সাধককে বুদ্ধিভ্রষ্ট করে হত্যা করতে দেবী দুবার ভাবেন না। তবে তুমি যা চাইছ তার জন্য একমাত্র বিট্টালিনী সাধনা করা যেতে পারে। কিন্তু…”
-কিন্তু কী গুরুদেব?
– বিট্টালিনী সাধনার পদ্ধতি যে অতি বীভৎস ও ভয়াবহ সুদীপ! সেকি তুমি পারবে? অতি নিম্ন তন্ত্রের কেবলমাত্র আচারভিত্তিক সাধনা হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র এই সাধন পদ্ধতির নৃশংসতা ও ভয়াবহতার জন্যই বহু সাধক এই সাধনার কথা ভুলেও ভাবেন না। শুধু তাই নয় মানুষের মনে বিভিন্ন প্রকার ভ্রম তৈরি করতে বিট্টালিনী যাকে বলে অদ্বিতীয়! দীর্ঘ তিন পক্ষ অর্থাৎ পয়তাল্লিশ দিনের সাধনা চলাকালীন দিন, রাত সর্বক্ষণ তুমি বিভিন্নরকম জিনিস দেখতে পাবে সুদীপ, অনুভব করবে ভয়ঙ্কর সব আতঙ্ক। সে সব জিনিস যেমন ভয়ানক তেমনি অদ্ভুত! এই ভ্রমের গোলকধাঁধায় পড়ে সম্পূর্ণ পাগল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারো তুমি! যদিও বিট্টালিনী সাধনায় একবার সফল হলে অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিশ্ব জয় করাও সম্ভব!
-পারবো! আমি পারবো গুরুদেব! শুধু কী করতে হবে সেটুকু আমায় বলুন। বেস্টসেলার লেখক হবার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি, মানুষ খুন পর্যন্ত! আপনি শুধু বলুন কি করতে হবে!
বিট্টালিনী কে ? বহু শতাব্দী প্রাচীন এই সাধনার ইতিহাসই বা কী? তার সাধনা এত ভয়ঙ্করই বা কেন? কেনই বা সাধারণ সাধক মাত্রেই এড়িয়ে চলেন বিট্টালিনী সাধনা? বিট্টালিনীর অদ্ভুত বিগ্রহ এর পিছনে আসলে লুকিয়ে আছে কোন ইতিহাস? বেস্ট সেলার লেখক হওয়ার নেশায় সত্যিই কি বিট্টালিনী সাধনা করবে সুদীপ? সত্যি সত্যিই কি তার জীবনে নেমে আসবে ভয়ঙ্কর ভ্ৰমের মৃত্যু কুয়ো? সেখান থেকে বেঁচে ফেরার কি কোনো উপায় আছে? কিই বা হবে এই সাধনার অন্তিম পরিণতি?
তিনটি সময়, তিনটি সাধনা, তিনজন সাধক। কি হবে শেষমেশ? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাবেন তন্ত্রের উপর ভিত্তি করে পূর্ণাঙ্গ থ্রিলার উপন্যাস “বিট্টালিনী” পড়লে।
Reviews
There are no reviews yet.